Dhaka ০৬:১১ অপরাহ্ন, বুধবার, ০১ অক্টোবর ২০২৫, ১৬ আশ্বিন ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সর্বশেষ:
দুর্গাপূজার শক্তিশালী অর্থনৈতিক বিস্তার মিয়ানমার-আরাকান আর্মির ওপর আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে চাপ সৃষ্টি করতে হবে দুর্গাপূজা প্রকৃতি ও মানবিক সম্পর্কের প্রতি গভীর ভালোবাসার বার্তা বহন করে : মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা চলতি বছর ডেঙ্গুতে মৃত্যুর সংখ্যা ২০০ ছুঁইছুঁই একাদশে বিশেষ কোটায় ভর্তি হলেন ৬০ শিক্ষার্থী কুড়িগ্রামে নদী ভাঙন বেড়েছে, পাউবোর বরাদ্দের অপেক্ষা ক্রিকেটে বিনিয়োগ করছে সৌদি আরব, আয়োজন করবে ফ্যাঞ্চাইজি লিগ নিবন্ধনের শর্ত পূরণ করেছে এনসিপি : ইসি ১৫ বছর পর মানব পাচার মামলায় আসামির যাবজ্জীবন মনোনয়নের বৈধতা পেলেন রেদুয়ান, নির্বাচন করতে হচ্ছে বুলবুল-ফাহিমকে

কুড়িগ্রামে নদী ভাঙন বেড়েছে, পাউবোর বরাদ্দের অপেক্ষা

  • Reporter Name
  • Update Time : ০২:৪২:৩৫ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৫
  • ১ Time View

নদী ভাঙনের কারণে প্রতিনিয়ত ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে কুড়িগ্রাম জেলা। প্রতি বছর বর্ষাকালে ব্রহ্মপুত্র, ধরলা, তিস্তা ও দুধকুমার নদ-নদীর তীরে ব্যাপক ভাঙন দেখা দেয়। যদিও বর্ষা মৌসুম শেষ হয়েছে, তবু নতুন করে নদীর ১৫টি পয়েন্টে ভাঙন দেখা দিয়েছে।

অনেক মানুষ তাদের ঘরবাড়ি সরিয়ে নিচ্ছেন। কেউ কেউ এখন খোলা আকাশের নিচে বসবাস করতে বাধ্য হচ্ছেন। এ বছরই পাঁচ শতাধিক পরিবার নদীভাঙনে বসতঘর হারিয়েছেন। ভুক্তভোগীরা অভিযোগ করেছেন, পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) এখন পর্যন্ত ভাঙন রোধে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়নি।

পাউবো সূত্রে জানা গেছে, ভাঙনকবলিত নয়টি পয়েন্টে জরুরি ভিত্তিতে জিও ব্যাগ ফেলার কাজ শুরু হয়েছে। বরাদ্দ পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বাকি পয়েন্টগুলোতেও কাজ করা হবে।

জেলার সাড়ে চার শতাধিক চরে প্রায় দুই হাজার পরিবার প্রতি বছর নদী ভাঙনে বসত হারায়। জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তার তথ্য অনুযায়ী, ২০১৬-২০২২ সালের মধ্যে ব্রহ্মপুত্র, ধরলা, তিস্তা ও দুধকুমার নদীর ভাঙনে ১৫ হাজার পরিবার তাদের ঘরবাড়ি হারিয়েছে। এ বছর ব্রহ্মপুত্র নদীর ভাঙনে কুড়িগ্রাম সদর, উলিপুর, চিলমারী ও রাজিবপুরে ৪৪৭টি বসতবাড়ি নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। রৌমারীর সোনাপুরে শতাধিক পরিবার, রাজারহাটে তিস্তার ভাঙনে ৬৩টি ও ফুলবাড়ীর ধরলা নদীর ভাঙনে ছয়টি পরিবার বসত হারিয়েছে। এসব পরিবার বর্তমানে অন্যের জমি বা বাঁধে আশ্রয় নিয়েছে। অনেকেই মাথা গোঁজার জায়গা না পেয়ে অন্যত্র চলে গেছে।

নদী তীরের বাসিন্দারা বলছেন, বর্ষার শেষ সময়ে ভাঙন তীব্র আকার ধারণ করেছে। প্রতিদিনই নদীগর্ভে বিলীন হচ্ছে ঘরবাড়ি, আবাদি জমি ও গাছপালা। সম্প্রতি টানা বৃষ্টি ও উজানের ঢলে নদীর পানি বিপৎসীমার কাছাকাছি ওঠানামা করেছে। পানি কমতে থাকায় দুধকুমার, ধরলা, ব্রহ্মপুত্র ও তিস্তার ভাঙন আরও বেড়েছে। গত এক সপ্তাহে সদর উপজেলার বানিয়াপাড়া, নাগেশ্বরীর বল্লভের খাস, রৌমারীর সোনাপুরসহ ফুলবাড়ি ও চিলমারী এলাকায় অন্তত ১৫টি পয়েন্টে নতুন করে ভাঙন দেখা দিয়েছে। এতে অন্তত ২০টি পরিবার নতুন করে বসতঘর হারিয়েছে। শত শত ঘরবাড়ি, আবাদি জমি ও বাজারঘর ভাঙনের ঝুঁকিতে রয়েছে।

কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার বানিয়া পাড়ার বাসিন্দা আশরাফুল ইসলাম (৭০) বলেন, আমার বাড়ি নদীর কিনারে। অর্ধেক বাড়ি সরিয়ে নিয়েছি, বাকি অর্ধেকও সরিয়ে নিতে হবে।

নাগেশ্বরী উপজেলার বল্লভের খাসের লেবু মিয়া (৬০) জানান, দুধকুমার নদীর ভাঙনে শত শত বিঘা জমি বিলীন হয়েছে, অনেকেই ঘরও হারিয়েছে। বারবার পানি উন্নয়ন বোর্ডে যোগাযোগ করেও কোনো লাভ হয়নি।

ফুলবাড়ীর চর গোরকমণ্ডপ এলাকার ধরলা নদীর ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত নুরনবী (৫৫) বলেন, গত এক মাসে গ্রামের ১৫টি ঘরবাড়ি ও জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। আমরা কোথায় যাব জানি না।

সালেকা বেগম (৬০) বলেন, বাবা-মায়ের কবর নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। সরকার ব্যবস্থা না নিলে গ্রামে থাকা সম্ভব হবে না।

ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল গফুর জানালেন, ব্রহ্মপুত্র নদীর ভাঙনে বানিয়াপাড়া ও সবুজপাড়ার শতাধিক বাড়ি বিলীন হয়েছে।

সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান মো. আবুল কালাম আজাদ বলেন, তিস্তার ভাঙনে দাড়িয়ারপার গ্রামের মানুষ বারবার ঠিকানা বদলাচ্ছে।

কুড়িগ্রাম চর উন্নয়ন কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক শফিকুল ইসলাম বাবু বলেন, উজান থেকে বালি-পলি এসে নদীতে ডুবোচর সৃষ্টি করছে। পানি ও বালির আঘাত গতি পরিবর্তন করায় ভাঙন তীব্র হচ্ছে। ড্রেজিং না করলে ভাঙন বন্ধ হবে না।

কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. রাকিবুল হাসান বলেন, বর্ষার শেষ সময়ে বৃষ্টি ও উজানের ঢলে নদীতে নতুন করে ১৫টি পয়েন্টে ভাঙন দেখা দিয়েছে। নয়টি পয়েন্টে জরুরি ভিত্তিতে কাজ শুরু হয়েছে। বরাদ্দ পেলে বাকিতেও কাজ হবে। এর আগে ৪৫টি পয়েন্টে কাজ করা হয়েছে।

Tag :

আপনার মন্ত্রব্য লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

KAZAL REKHA

জনপ্রিয়

দুর্গাপূজার শক্তিশালী অর্থনৈতিক বিস্তার

কুড়িগ্রামে নদী ভাঙন বেড়েছে, পাউবোর বরাদ্দের অপেক্ষা

Update Time : ০২:৪২:৩৫ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৫

নদী ভাঙনের কারণে প্রতিনিয়ত ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে কুড়িগ্রাম জেলা। প্রতি বছর বর্ষাকালে ব্রহ্মপুত্র, ধরলা, তিস্তা ও দুধকুমার নদ-নদীর তীরে ব্যাপক ভাঙন দেখা দেয়। যদিও বর্ষা মৌসুম শেষ হয়েছে, তবু নতুন করে নদীর ১৫টি পয়েন্টে ভাঙন দেখা দিয়েছে।

অনেক মানুষ তাদের ঘরবাড়ি সরিয়ে নিচ্ছেন। কেউ কেউ এখন খোলা আকাশের নিচে বসবাস করতে বাধ্য হচ্ছেন। এ বছরই পাঁচ শতাধিক পরিবার নদীভাঙনে বসতঘর হারিয়েছেন। ভুক্তভোগীরা অভিযোগ করেছেন, পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) এখন পর্যন্ত ভাঙন রোধে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়নি।

পাউবো সূত্রে জানা গেছে, ভাঙনকবলিত নয়টি পয়েন্টে জরুরি ভিত্তিতে জিও ব্যাগ ফেলার কাজ শুরু হয়েছে। বরাদ্দ পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বাকি পয়েন্টগুলোতেও কাজ করা হবে।

জেলার সাড়ে চার শতাধিক চরে প্রায় দুই হাজার পরিবার প্রতি বছর নদী ভাঙনে বসত হারায়। জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তার তথ্য অনুযায়ী, ২০১৬-২০২২ সালের মধ্যে ব্রহ্মপুত্র, ধরলা, তিস্তা ও দুধকুমার নদীর ভাঙনে ১৫ হাজার পরিবার তাদের ঘরবাড়ি হারিয়েছে। এ বছর ব্রহ্মপুত্র নদীর ভাঙনে কুড়িগ্রাম সদর, উলিপুর, চিলমারী ও রাজিবপুরে ৪৪৭টি বসতবাড়ি নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। রৌমারীর সোনাপুরে শতাধিক পরিবার, রাজারহাটে তিস্তার ভাঙনে ৬৩টি ও ফুলবাড়ীর ধরলা নদীর ভাঙনে ছয়টি পরিবার বসত হারিয়েছে। এসব পরিবার বর্তমানে অন্যের জমি বা বাঁধে আশ্রয় নিয়েছে। অনেকেই মাথা গোঁজার জায়গা না পেয়ে অন্যত্র চলে গেছে।

নদী তীরের বাসিন্দারা বলছেন, বর্ষার শেষ সময়ে ভাঙন তীব্র আকার ধারণ করেছে। প্রতিদিনই নদীগর্ভে বিলীন হচ্ছে ঘরবাড়ি, আবাদি জমি ও গাছপালা। সম্প্রতি টানা বৃষ্টি ও উজানের ঢলে নদীর পানি বিপৎসীমার কাছাকাছি ওঠানামা করেছে। পানি কমতে থাকায় দুধকুমার, ধরলা, ব্রহ্মপুত্র ও তিস্তার ভাঙন আরও বেড়েছে। গত এক সপ্তাহে সদর উপজেলার বানিয়াপাড়া, নাগেশ্বরীর বল্লভের খাস, রৌমারীর সোনাপুরসহ ফুলবাড়ি ও চিলমারী এলাকায় অন্তত ১৫টি পয়েন্টে নতুন করে ভাঙন দেখা দিয়েছে। এতে অন্তত ২০টি পরিবার নতুন করে বসতঘর হারিয়েছে। শত শত ঘরবাড়ি, আবাদি জমি ও বাজারঘর ভাঙনের ঝুঁকিতে রয়েছে।

কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার বানিয়া পাড়ার বাসিন্দা আশরাফুল ইসলাম (৭০) বলেন, আমার বাড়ি নদীর কিনারে। অর্ধেক বাড়ি সরিয়ে নিয়েছি, বাকি অর্ধেকও সরিয়ে নিতে হবে।

নাগেশ্বরী উপজেলার বল্লভের খাসের লেবু মিয়া (৬০) জানান, দুধকুমার নদীর ভাঙনে শত শত বিঘা জমি বিলীন হয়েছে, অনেকেই ঘরও হারিয়েছে। বারবার পানি উন্নয়ন বোর্ডে যোগাযোগ করেও কোনো লাভ হয়নি।

ফুলবাড়ীর চর গোরকমণ্ডপ এলাকার ধরলা নদীর ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত নুরনবী (৫৫) বলেন, গত এক মাসে গ্রামের ১৫টি ঘরবাড়ি ও জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। আমরা কোথায় যাব জানি না।

সালেকা বেগম (৬০) বলেন, বাবা-মায়ের কবর নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। সরকার ব্যবস্থা না নিলে গ্রামে থাকা সম্ভব হবে না।

ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল গফুর জানালেন, ব্রহ্মপুত্র নদীর ভাঙনে বানিয়াপাড়া ও সবুজপাড়ার শতাধিক বাড়ি বিলীন হয়েছে।

সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান মো. আবুল কালাম আজাদ বলেন, তিস্তার ভাঙনে দাড়িয়ারপার গ্রামের মানুষ বারবার ঠিকানা বদলাচ্ছে।

কুড়িগ্রাম চর উন্নয়ন কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক শফিকুল ইসলাম বাবু বলেন, উজান থেকে বালি-পলি এসে নদীতে ডুবোচর সৃষ্টি করছে। পানি ও বালির আঘাত গতি পরিবর্তন করায় ভাঙন তীব্র হচ্ছে। ড্রেজিং না করলে ভাঙন বন্ধ হবে না।

কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. রাকিবুল হাসান বলেন, বর্ষার শেষ সময়ে বৃষ্টি ও উজানের ঢলে নদীতে নতুন করে ১৫টি পয়েন্টে ভাঙন দেখা দিয়েছে। নয়টি পয়েন্টে জরুরি ভিত্তিতে কাজ শুরু হয়েছে। বরাদ্দ পেলে বাকিতেও কাজ হবে। এর আগে ৪৫টি পয়েন্টে কাজ করা হয়েছে।