গাজামুখী সুমুদ ফ্লোটিলা থেকে পাকিস্তানি জামায়াতের নেতা আটক
গাজা অভিমুখী নৌবহর গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা থেকে পাকিস্তানের জামায়াত-ই-ইসলামীর সাবেক সিনেটরকে আটক করেছে ইসরায়েলি কমান্ডোরা/ এক্স (আগে টুইটার) থেকে সংগৃহীত ছবি
গাজা অভিমুখী নৌবহর গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা থেকে আটকদের মধ্যে রয়েছেন পাকিস্তানের সাবেক সিনেটর মুস্তাক আহমদ খান। তিনি পাকিস্তানের জামায়াত-ই-ইসলামীর (জেআই) সিনেটর ছিলেন। বৃহস্পতিবার (২ অক্টোবর) মুস্তাক আহমদকে গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা থেকে আটক করে ইসরায়েলি বাহিনী। তিনি গ্লোবাল সুমুদ বহরে পাকিস্তানি প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন।
পাক-ফিলিস্তিন ফোরাম নামের একটি অধিকার সংগঠনের বরাত দিয়ে পাকিস্তানি সংবাদমাধ্যম ডন এসব তথ্য জানায়। এদিকে, নৌবহরে অংশ নেওয়া ব্যক্তিদের আটক করার ঘটনাকে ‘নৃশংসা হামলা’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছে পাকিস্তানসহ আরও কয়েকটি দেশ। তারা আটকদের অবিলম্বে মুক্তির দাবি জানিয়েছে।
এক্সে দেওয়া পোস্টে পাক-ফিলিস্তিন ফোরাম লিখেছে, সিনেটর মোশতাক আহমদ খানকে গ্রেফতার করেছে ইসরায়েল। শুধু একটি নৌযান পালাতে সক্ষম হয়েছে, যেটা ছিল পর্যবেক্ষক নৌকা। এটির দায়িত্ব ছিল তথ্য সংগ্রহ করে নিরাপদে ফিরে যাওয়া। আমাদের অন্য প্রতিনিধি সাইয়্যেদ উজায়ের নিজামী ওই পর্যবেক্ষক নৌকায় ছিলেন ও তিনিই সিনেটর মোশতাক আহমদের জাহাজ আটক হওয়ার খবর শেয়ার করেন।
জেআই প্রধান হাফিজ নাঈমুর রহমান বহরে থাকা কর্মীদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে গাজার প্রতি সংহতি প্রকাশে দেশজুড়ে বিক্ষোভের ঘোষণা দেন। লাহোরে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, আমরা শুক্রবার (৩ অক্টোবর) সুমুদ গাজা বহরের ওপর হামলার প্রতিবাদে দেশব্যাপী কর্মসূচি পালন করব।
তিনি আরও বলেন, আমরা আমাদের জাতীয় নেতাদের প্রতি আহ্বান জানাই যেন তারা এ ব্যাপারে কার্যকর ভূমিকা পালন করেন।
এদিকে, সাবেক পিটিআই সিনেটর ফয়সাল জাভেদ খান এক্সে পোস্ট দিয়ে মোশতাক আহমদের নিরাপত্তার জন্য দোয়া করে লিখেছেন, আসুন, আমরা এসব শান্তিপ্রিয় মানবতাবাদীদের বিরুদ্ধে ইসরায়েলের এই আগ্রাসনের নিন্দা জানাই।
পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফ এক্সে দেওয়া এক পোস্টে লেখেন, ৪৪টি দেশের ৪৫০ জনেরও বেশি মানবিক সহায়ককে বহনকারী ৪০টি নৌকার সুমুদ ফ্লোটিলায় ইসরায়েলি বাহিনীর নৃশংস হামলার তীব্র নিন্দা জানাই। ইসরায়েলি বাহিনী অবৈধভাবে যাদের আটক করেছে, আমরা তাদের নিরাপত্তা ও অবিলম্বে মুক্তি কামনা করি।
তিনি বলেন, তাদের অপরাধ ছিল অসহায় ফিলিস্তিনিদের জন্য সহায়তা বহন করা। এই বর্বরতা বন্ধ করতে হবে। শান্তিকে সুযোগ দিতে হবে ও মানবিক সহায়তা অবশ্যই গন্তব্যে পৌঁছাতে হবে।
পরে আরেক পোস্টে তিনি পাকিস্তানিদের, বিশেষত সাবেক জামায়াতে ইসলামী সিনেটর মুস্তাক আহমদের ফ্লোটিলায় অংশগ্রহণের প্রশংসা করেন। তিনি একে ‘মানবতার নীতির সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ মহৎ ত্রাণ উদ্যোগ’ হিসেবে উল্লেখ করেন।
তিনি জোর দিয়ে বলেন, পাকিস্তান সরকার মানবজীবনের মর্যাদা ও অবিচ্ছিন্ন সহায়তার নীতি সমর্থন করে। আমাদের নাগরিকদের ফেরত দাবি করছি। আমরা তাদের নিরাপত্তা, মর্যাদা ও দ্রুততম সময়ে দেশে প্রত্যাবর্তনের জন্য চেষ্টা করছি এবং প্রার্থনা করছি।
ফ্লোটিলার আয়োজকদের বরাতে জানানো হয়েছে, গত রাত থেকে ইসরায়েলি বাহিনী সর্বশেষ অভিযানে একে একে ৩৯টি নৌকা আটক করে। এখনো একটি নৌকা গাজার পথে। মোট ৪৫টি নৌকা নিয়ে গঠিত এ ফ্লোটিলা গত মাসে স্পেন থেকে রওনা দিয়েছিল। এর মধ্যে ছিলেন সুইডিশ জলবায়ু কর্মী গ্রেটা থুনবার্গসহ বিভিন্ন দেশের সংসদ সদস্য ও বিভিন্ন পেশার মানুষ।
এদিকে, ফ্লোটিলা আটক নিয়ে বিশ্বজুড়ে তীব্র নিন্দার পর বৃহস্পতিবার (২ অক্টোবর) ইসরায়েলের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে (আগে টুইটার) জানায়, ফ্লোটিলার সবাই নিরাপদে রয়েছেন ও তাদের ইউরোপে ফেরত পাঠানো হবে।
বিবৃতিতে বলা হয়, হামাস-সুমুদ উসকানি শেষ হয়েছে। কোনো নৌকাই সক্রিয় যুদ্ধক্ষেত্রে প্রবেশ বা বৈধ নৌ অবরোধ ভাঙতে সফল হয়নি। সবাই নিরাপদে ইসরায়েলে পৌঁছাচ্ছে, সেখান থেকে তাদের ইউরোপে ফেরত পাঠানো হবে। এতে আরও বলা হয়, এ উসকানির একটি নৌকা এখনো দূরে অবস্থান করছে। সেটি কাছে এলে এর চেষ্টাও প্রতিহত করা হবে।













